পরিবারের কেউ না ডাকা পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটানো আপনাকেই বিয়ের পর ভোরে ছুটতে হতে পারে বাজারে। কোনোদিন রান্না করা কথা আপনি ভাবেননি কিন্তু বিয়ের পর আপনাকে হয়তো ঘরে তিন বেলা কী রান্না হবে সেই সিদ্ধান্তও নিতে হবে। ১. পছন্দ-অপছন্দ বিয়ের কথা শুরু হলে আপনারাও নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা বলতে থাকুন। গল্পচ্ছলে একজন আরেকজনের পছন্দ বা অপছন্দের বিষয়গুলো জেনে নিতে পারেন, এতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। আবার অপর পক্ষেরও আপনাকে জানার সুযোগ তৈরি হবে। এটা সম্বন্ধ করে বিয়ের বেলায় তো বটেই, প্রেমের বিয়েতেও ঝালাই করে নেওয়া ভালো। এতে সংসার শুরু হওয়ার পর কিছু বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতি থাকবে। ২. আর্থিক ব্যবস্থা বিয়ের পর শুধু প্রেম দিয়ে দাম্পত্য সুন্দর রাখা সম্ভব নয়। যখনই সেখানে আর্থিক সংকট দেখা দেবে, তখনই অশান্তি দানা বাঁধবে। ‘অভাব এলে প্রেম জানালা দিয়ে পালায়’—বহুল প্রচলিত এই কথাটি তো আর এমনি এমনি আসেনি। তাই বিয়ের আগেই বুঝে নিন আপনার আর্থিক বিষয়ে সঙ্গীর প্রত্যাশা কী। তিনি কি সংগ্রাম করে বেড়ে উঠেছেন, নাকি টাকার প্রাচুর্যে? সঙ্গী যদি ছোটবেলা থেকে অঢেল টাকাপয়সা খরচে অভ্যস্ত না হয়, তাহলে আপনার জন্য বিষয়টি স্বস্তির। ৩. কোথায় থাকবেন সাধারণত আমাদের দেশে বিয়ের পর কনেকে নিয়ে আসা হয় স্বামীর গৃহে। সেখানে কেউ হয়তো বাবা, মা, ভাইবোনসহ থাকেন, কেউ আবার আরও বড় পরিসরে। এখানেই তৈরি হয় সংকট। মেয়েটি হয়তো ‘নিউক্লিয়ার’ পরিবারের ছোট পরিসরে বড় হয়েছে। এত বড় পরিবারে থেকে সে অভ্যস্ত নয়। আবার স্বামী-স্ত্রী কর্মজীবী হলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে আবাস থেকে কতটা দূরে কর্মস্থল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মনোবিজ্ঞানী জানান, তাঁর চেম্বারে সম্প্রতি ঢাকা শহরের এক জনপ্রিয় (বিত্তবান) দম্পতি এসেছিলেন। সংসার শুরুর তিন মাসের মধ্যেই থাকার জায়গা (বাসা) নিয়ে ঝামেলায় পড়েছেন এই দম্পতি। শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছেন স্ত্রী, আলাদা বাসা নিতে চান তিনি। কারণ হিসেবে বলছেন, শাশুড়ির সবকিছুতে অতি আগ্রহ। সারা দিন অফিস শেষে বাড়িতে ফেরার পর স্বামীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর ফুরসতও পান না। এদিকে আবার ঘরের সব কাজ মেয়েটিকেই করতে হয়। ছোটবেলা থেকে হোস্টেলে বড় হওয়ার কারণে তিনি থাকতে চান নিজের মতো করে। যা এখানে সম্ভব হচ্ছে না। হয় আলাদা বাসা নিতে হবে; অথবা মেয়েটি এ বিয়ে আর এগিয়ে নিতে চান না। ৪. কাজকর্ম বিয়ের পর নতুন বউয়ের বাইরে কাজ করার ব্যাপারে অনেক পরিবারে আপত্তি থাকতে পারে। তাই বিয়ের আগেই পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। এই সিদ্ধান্ত পাত্র-পাত্রীদেরই নিতে হবে। ঘরের কাজ মানেই স্ত্রী করবে, আপনার সঙ্গীর মধ্যে এই ভাবনা থাকলে বিয়ের আগে আরেকবার ভাবতে পারেন। ৫. সন্তানসন্ততি আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় অনেকেই বিয়ের আগে বিষয়টি নিয়ে হয়তো আলোচনা করতে দ্বিধায় পড়েন। তবে নিজেদের মধ্যে সন্তানাদি নিয়ে আলোচনা করে নেওয়াও ভালো। কত দিন সন্তান নিতে চান না, কয়টা সন্তান চান; কিংবা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা এগিয়ে রাখা যেতে পারে। ৬. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কেউ কেউ নিজের সুখ-দুঃখের নানা ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাগাভাগি করে নিতে ভালোবাসেন। কেউ আবার একান্তে রাখতে চান এসব বিষয়। দুই ধরনের আচরণের পক্ষে দুজনেরই হয়তো শানদার যুক্তি আছে। তবে বিয়ে করার আগে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আপনার অবস্থান সঙ্গীকে পরিষ্কার করে তুলে ধরুন। ৭. অভ্যাস মানুষের কিছু অভ্যাস ছোটবেলা থেকে গড়ে ওঠে। যার কিছু হয়তো ঠিক, কিছু ভুল। তবে ঠিক–ভুল মিলিয়েই মানুষ। আপনার হয়তো রাতে ঘুমানোর জন্য চাই নিকষ অন্ধকার, কিন্তু সঙ্গীর অভ্যাস হয়তো ডিম লাইটের আলোয় ঘুমানো। বিছানা গোছানো, মশারি টাঙানো, আলমারি পরিচ্ছন্ন রাখার মতো ছোটখাটো বিষয়ও বিয়ের পর মহা ঝামেলা পাকিয়ে তুলতে পারে। আপনার সরলরেখার মতো চলতে থাকা দাম্পত্যে ছন্দপতন ঘটাতে পারে । দুজনের অভ্যাস আর বদভ্যাসের সবটাই শুনে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিন জুটি গড়বেন কি না। বিয়ে করতে যাচ্ছেন মানে আজীবন আরেকজনের সঙ্গে বন্ধনে জড়াতে যাচ্ছেন। বিয়ের কথাবার্তা পাকা হওয়ার আগেই এসব বিষয়ে সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া ভালো।